♥পরমারাধ্য গুরুদেব ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসপরিব্রাজক আচার্য অষ্টোত্তরশত শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের জীবনীঃ-
♦শুভ আবির্ভাবঃ- শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের জন্ম হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইস্কন্সিন প্রদেশের মিলওয়াকি অঞ্চলে ১৯৪৯ সালের ৯ এপ্রিল ( চৈত্র মাসে)। সেই দিনটি ছিল রামনবমী তিথির পরবর্তী পুণ্য-পবিত্র কামদা একাদশী তিথিতে। তার পিতার নাম ছিল মি. জন হুবার্ট এর্ডম্যান। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল জন গর্ডন এর্ডম্যান। তিনি ঐশ্বর্যময় পরিবেশে জন্মগ্রহন করে অত্যন্ত প্রাচুর্যের মধ্যে প্রতিপালিত হন। তাঁর পিতামহ ছিলেন বহু কোটি ডলার সম্পদ সমৃদ্ধ একটি রঙের কারখানার প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। জনের বয়স যখন মাত্র ১১ বছর তখন পিতামহের উপদেশে ভগবানের পবিত্র নাম জপ করার মাধ্যমে তাঁর নিজের এক দুরারোগ্য চর্মরোগ নিজেই আরোগ্য করেছিলেন ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্য বালক জনের জীবনে সেই ভাবেই প্রতিভাত হয়েছিল, ঠিক যেন প্রত্যুষের ঊষালোকের মতোই।
♦শিক্ষা জীবনঃ- অসাধারণ মেধাবী জন ১৪ বছর বয়সে সেন্ট জন্স একাডেমী কলেজে ভর্তি হয়ে অনায়াসে সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করে স্নাতক উপাধি লাভ করেন। এই কৃতিত্বের ফলে আমেরিকার কয়েকটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনকে ছাত্রবৃর্ত্তি প্রদান করা হয়। তরুণ জন গর্ডন বিখ্যাত ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একদিন ক্লাসে অধ্যাপকের কাছে ভগবান বৌদ্ধদেবের কাহিনী শুনে প্রভাবিত হন এবং আধ্যাত্ম জীবনের আগ্রহ নিয়ে যথার্থ গুরুর অনুসন্ধানে ভারতবর্ষে আসার জন্য উদ্যোগী হন।
♦অপ্রাকৃত কৃষ্ণভাবনায় প্রবেশঃ- পাশ্চাত্য দেশে কোন গুরুর সন্ধান না পেয়ে তিনি স্থির করেছিলেন যে, সদ্ গুরুর সন্ধানে ভারতবর্ষে যাবেন। আর যখন তিনি ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য এ. সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের কয়েকজন শিষ্যের সাথে একটি পার্কে গ্রন্থ বিতরণ এবং কীর্তনরত অবস্থায় সাক্ষাত হয়। তখন একজন ভক্ত তাঁকে যখন একটি ভগবদ্গীতা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তিনি তাঁর কপালে তিলক দেখে তৎক্ষণাৎ হতবাক হয়েছিলেন এবং কিছু বিস্ময়কর অনুভূতি অনুভব করতে করতে সেখান থেকে দৌঁড়াতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিট দৌঁড়ানোর পর থেমে ভাবতে লাগলেন যে, তিনি কি দেখলেন এবং কেন সেটি তাঁকে অতিমাত্রায় আকৃষ্ট করেছিল। তাঁর অনুভূতিটি এমন ছিল যেন বহুকাল পূর্বে স্মৃতিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকা কোনো বিষয়ের পুনঃজাগরণ হয়েছিল। তারপর তিনি আবার পার্কের সেই স্থানে ফিরে গেলেন, কিন্তু ততক্ষণে ভক্তরা ঐ স্থান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি হরে কৃষ্ণ ভক্তদের খুঁজতে শুরু করলেন। যেহেতু তখন ইস্কন তত বেশি পরিচিত ছিল না, তাই দীর্ঘ সময় খোঁজাখুজি করার পর ১৯৬৮ সালের কোন এক সময় সানফ্রান্সিস্কো শহরে রথযাত্রা উৎসবের প্রস্তুতিলগ্নে তিনি ইস্কন মন্দিরের সন্ধান পান। জয়ানন্দ প্রভু তখন আসন্ন জগন্নাথদেবের রথ তৈরির কাজ করছিলেন এবং জয়ানন্দ প্রভুর নির্দেশে তিনিও সেই সেবায় যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে শ্রীল প্রভুপাদের সাথে সাক্ষাৎ করেণ। শ্রীল প্রভুপাদ তাকে তাঁর সাথে পসাদ পাওয়ার জন্য নিমন্ত্রন করার মাধ্যমে অনুপ্রানিত করেছিলেন এবং বুঝিয়েছিলেন যে, অন্যান্য সাধারণ জাগতিক কাজের থেকে শ্রীজগন্নাথদেবের রথ তৈরি করাটা অনেক শ্রেষ্ঠ কাজ। তারপর তিনি দু'মাস পর্যবেক্ষন করার পর সম্পূর্ণরুপে কৃষ্ণসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬৮ সালে ইস্কনে যোগদান করেন। জয়ানন্দ প্রভু তাঁর মস্তক মুণ্ডন করে দিয়েছিলেন। এত কম সময়ে মস্তক মুণ্ডন করে ভগবানের সেবাই যুক্ত হওয়ায় সবাই বিস্মিত হয়েছিলেন। অতঃপর ১৯৬৮ সালের ২৪ জুলাই মন্ট্রিয়েল মন্দিরে ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য প্রভুপাদের নিকট তরুণ জন বিনীত চিত্তে 'হরিনাম দীক্ষা' গ্রহন করে শ্রী জয়পতাকা দাস ব্রহ্মচারী নামে পরিচিত হন।
♦সন্ন্যাস গ্রহণঃ- ১৯৭০ সালে রাধাষ্টমীর পুণ্য তিথিতে মাত্র ২১ বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করে শ্রীল জয়পতাকা স্বামী রুপে পরিচিত হন।
♦শ্রীধাম মায়াপুরে সেবা দায়িত্বঃ- ১৯৭১ সালে শ্রীল প্রভুপাদ মায়াপুরে এক বৈদিক নগর পত্তনের প্রকল্প রুপায়ণের দুরুহ ব্রতভার অর্পণ করে বলেছিলেন, 'জয়পতাকা' আমি তোমাকে ভগবানের ধাম দিলাম। এখন তুমি এর উন্নতি বিধান করো, এটিকে যথাযথভাবে সাজিয়ে তোল।
♦আচার্যপদে অভিষিক্তঃ- ১৯৭৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারজকে আচার্যের দায়িত্বভার অর্পণ করেণ।
♦কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারঃ-
* সাংগঠনিক সেবা * প্রভুপাদের নির্দেশে প্রতিমাসে ১০ হাজার বড় গ্রন্থ এবং এক লক্ষ ছোট গ্রন্থ বিতরণ * নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা ও তীর্থযাত্রা * নবদ্বীপ মণ্ডল উন্নয়ন * ফুড ফর লাইফ * গ্রন্থাবলী রচনা * নিতাই পদ কমল তরণী * প্রচারকেন্দ্র * ভক্তিবেদান্ত স্বামী চ্যারিটি ট্রাষ্ট * আসুরিক আক্রমন * হরিনামের প্লাবন * বিরামহীন বিশ্ব ভ্রমণ * বাংলাদেশ প্রচার পরিক্রমা * শ্রীল প্রভুপাদ বন্ধনা রচনা * শ্রীল প্রভুপাদের মহিমা রচনা।
♦শ্রীল প্রভুপাদের উক্তিঃ- জয়পতাকা পূর্বজন্মে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ ছিলেন, বিশ্বের যত নগরাদি গ্রামে কৃষ্ণভাবনামৃত বিতরণের মহান ব্রত উদযাপনের উদ্দেশ্যেই পাশ্চাত্য জগতে জন্মগ্রহন করেছেন।

0 Comments